আমাদের সব স্বপ্ন কাদার মধ্যেই আটকে আছে

আমাদের সব স্বপ্ন কাদার মধ্যেই আটকে আছে

বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের গাঁওখালী গ্রামটি শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায়। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও একটা জায়গায় আটকে আছে সবার ভাগ্য। একমাত্র রাস্তাটি ভালো না হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এলাকাটি। উন্নয়নবঞ্চিত ও অবহেলিত এই গ্রামটির মানুষের মনে তাই বেজায় দুঃখ।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই যোগাযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এখানের বাসিন্দারা। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো পাকা রাস্তা না থাকায় প্রতিনিয়ত এটি দিয়েই চলতে হয় তাদের। রিকশা বা ভ্যান দূরে থাক, সাইকেলেও চলাচল করা যায় না রাস্তাটি দিয়ে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে বা অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতে নৌকা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে আছে রাস্তাটি। পথ চলতি মানুষকে নাজেহাল হতে দেখা গেছে। গাঁওখালী-রঘুনাথপুর হয়ে মূল সড়কে আসার জন্য মধ্যবর্তী এই দুই কিলোমিটার রাস্তা ১৫ বছর আগে ইটের সলিং দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু রাস্তার বেশির ভাগ ইট উঠে গেছে। এতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। আর যে অংশে ইটের সলিং, তা আস্তে আস্তে উঠে কাদায় পরিণত হচ্ছে।

এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বাঁধ ও রাস্তা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি বাড়লেই তলিয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। এ নরক-সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে অতিদ্রুত পাকা রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় রাখাল চন্দ্র, লিটন, অপূর্বসহ কয়েকজন হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকে। তখন হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে নিতে সঙ্গে থাকা ভালো মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়। কত রাস্তাই তো ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা কোনো দিন পাকা হলো না। আমাদের সব স্বপ্ন এই কাদার মধ্যেই আটকে আছে।

শংকর সাহা নামের একজন জানান, এই গ্রামে আগে অনেক পরিবারের বসবাস ছিল। কমতে কমতে এখন মাত্র তিন থেকে চার শ পরিবার আছে। কাদার মধ্যে কেই-বা থাকতে চায়? যাদের সামর্থ্য আছে, তারা চলে যায় শহরের দিকে। আমরা গরিব মানুষ। না পারি যাইতে আর না পারি থাকতে। সব দিকে এত উন্নয়নের কথা শুনি, আমরা তাহলে উন্নয়নবঞ্চিত কেন? ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কি আমাদের মতো অন্ধকারেই থাকবে?

স্থানীয় দোকানদার পতিত পবন সাহা বলেন, রাস্তাঘাট না থাকায় নৌকায় করে মালামাল আনতে হয়। একদিকে খরচ বেশি অন্যদিকে সময় লাগে অনেক। কী করব, অন্য কোনো উপায়ও তো নেই।

গৃহিণী রিতা বৈরাগী বলেন, এ ধরনের রাস্তাঘাটে চলতে আমাদের লজ্জা হয়। বৃষ্টি-জোয়ারে জল উঠে সব তলায়ে যায়। রান্নার চুলাও ডুবে যায়। তখন স্বামী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকা লাগে। আমাদের আর কিছু লাগবে না। আমরা সরকারের কাছে শুধু একটা ভালো রাস্তা চাই।

সরকারি পিসি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শান্তনু সাহা জানান, স্বাভাবিক সময়েও আমাদের রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালানো যায় না। হাঁটুসমান কাদায় বন্দি হয়ে আছে আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা। অনেক কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। উন্নয়নের বাংলাদেশে দিন দিন আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের দাবি তো শুধু একটা রাস্তা। আমাদের জন্য একটা রাস্তা করে দেওয়া কি খুব কঠিন?

গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য বেল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন এই ইটের সলিংয়ের রাস্তা দিয়ে দুই গ্রামের হাজার খানেক মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। এ ছাড়া জোয়ারে আর বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় ইট উঠে মাটি বের হয়ে গেছে।

গোটাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী বলেন, আশপাশে পাকা রাস্তা থাকলেও দুই গ্রামের মধ্যে মাত্র দুই কিলোমিটার যে কাঁচা রাস্তা রয়েছে, তার জন্য সহস্রাধিক মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে এই রাস্তাটি পাকা করার জন্য উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন জানিয়েছি। রাস্তাটি পাকা হলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আমরা চাই আগামী বর্ষা মৌসুম আসার আগেই রাস্তাটি যেন পাকা করা হয়।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, ভাঙনকবলিত ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই দরপত্র আহ্বান করে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।

বাগেরহাটের সদর উপজেলা প্রকৌশলী জ্যোতিময় মোহন্ত বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার অনুন্নত সব সড়কের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষ করে সড়কগুলো চলাচল উপযোগী করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন